আপেল
একটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও পরিচিত ফল, যা সব যায়গায় পাওয়া যায়। প্রতিদিন
একটি আপেল খান, ডাক্তারের
প্রয়োজন দূরে সরান’- অতি পুরানো কথা হলেও কথাটি
মিথ্যা নয়। এখন প্রশ্ন আপেল খেলে ডাক্তারের প্রয়োজন কেন কম পড়বে? কী আছে
আপেলে যে, এটি এত উপকারী দেহের জন্য। এটি রোগ প্রতিরোধক ও পুষ্টিকর একটি ফল
যা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপেলে আছে শর্করা, ভিটামিন, খনিজ
লবণ, আঁশ, পেকটিন ও ম্যালিক এসিড। শর্করা প্রায় ৫০ শতাংশ। ভিটামিনের মধ্যে
আছে ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি এবং এগুলোর উপস্থিতি আপেলের ছালে ও ছালের
সাথে লাগানো মাংসল অংশেই বেশি। আপেলের ছালে মাংসল অংশের চেয়ে প্রায় ৫ গুণ
বেশি ভিটামিন-এ আছে। খনিজ লবণের মধ্যে আছে প্রচুর পটাশিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ।
সোডিয়ামের পরিমাণ খুবই সামান্য। একটু দামী হলেও আপেল সত্যি সত্যিই খুব
উপকারি। চলুন এখন আপেলের গুনাগুন জেনে নিই।
১। ক্যান্সার প্রতিরোধে
আপেল
ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। আপেলের মধ্যে পেকটিন জাতীয়
একটি উপাদান থাকে যা শরীরকে কোলন ক্যান্সার থেকে দূরে রাখে। ফুসফুসের
ক্যান্সার ও লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধেও আপেলের ভূমিকা আছে। আপেল সবধরনের
ক্যানসার রোধ করতেও সাহায্য করে থাকে।
২। হার্ট ভালো রাখে
আপেল
কমায় হার্ট এট্যাকের ঝুঁকিও। আপেলের লৌহ রক্তশূন্যতায় উপকারী। পেকটিন আঁশ
ক্ষতিকর কলেস্টেরল এলডিএল কমায়। হার্ট এট্যাক ও স্টোক প্রতিরোধ করে। আরো
আপেলে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট উপাদানসমূহ, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য
অত্যন্ত উপকারী।
৩। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে
আপেল
খুবই পুষ্টিগুণে ভরপুর। অ্যাপেল খেলে খাদ্যের চাহিদার সাথে ভিটামিনের
ঘাটটি পূরণ হয়। ফলে মেদ জমে না এবং স্বাস্থ্য সঠিক থাকে। আর প্রতিদিন গড়ে
৩টি আপেল খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব সহজ হয়।
৪। দাঁত ভালো রাখে
ভিটামিন-সি দাঁতের মাড়ির জন্য উপকারী। আপেলের রস দাঁতের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ফলে দাঁত ভালো থাকে।
৫। ত্বক ভালো থাকে
ভিটামিন-এ
ও ভিটামিন-সি শরীরের জন্য খুবই উপকারী, দু’টোই এন্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের
কোষগুলোর রক্ষাকবচ। স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির জন্য ভিটামিন-এ দরকার। ত্বক
মসৃণ রাখতেও আপেলের গুনাবলি বলে শেষ করা যায় না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে
প্রতিদিন আপেল খেলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়।
৬। হজম ক্ষমতা বাড়তে
আপেলের
শর্করা শক্তির উৎস। এই শর্করা খাদ্যনালীতে ধীরে-ধীরে ভেঙ্গে হজম হয় বলে
শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে। প্রতিদিন আপেল খেলে হজমের
জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয় পেটে| ফলে হজম শক্তি বাড়ে।
৭। বাতের ব্যথা দূর করতে
আপেলের ম্যালিক এসিড শরীরের ইউরিক এসিডকে নিষ্ক্রিয় করে বাতের ব্যথা দূর করতে পারে। সুতরাং আপেল বাতের ব্যথাও উপকারী।
৮। ফ্রি রেডিক্যাল দূরকরনে
আপেলের
ছালে আছে কোয়ার্সিটির নামক এক এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরে প্রতিনিয়ত তৈরি
হওয়া ফ্রি রেডিক্যাল দূর করে। কোয়ার্সিটিন আলজেইমার্স ডিজিজ ও পারকিনসনিজম
নামক অসুখ প্রতিরোধেও সহায়ক। কোয়ার্সিটিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। কমিয়ে
দেয় পাকস্থলি ও কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনা।
৯। পানিশুন্যতা দূর করতে
আপেলে
প্রচুর পরিমানে পানি থাকে। ফলে আপেল খেলে তৃষ্ণা ও পানিশুন্যতা দূর হয় এবং
শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়ক হয়। আমাদের পানিশূন্যতা পূরণ করতে অ্যাপেলের
জুড়ি নেয়।
১০। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
আপেলে
পেকটিন নামের একটি উপাদান থাকে। পেকটিন ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক রেখে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
আপেল কোন অসুবিধা নয়।
১১। রোগ-প্রতিরোধে
ভিটামিন-সি’র
প্রয়োজন আরো নানান জায়গায় যেমন- কোলাজেন তৈরিতে, ক্ষত শুকাতে, খাদ্যনালী
থেকে লৌহ শোষণ করতে। আপেলের প্রচুর গুনাগুন থাকাই দেহের রোগ-প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
১২। অ্যালঝেইমার্স প্রতিরোধ
আজকাল
শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণ সার ব্যবহার করার ফলে খুব কম সময়ে আমাদের বয়সের
ছাপ পড়ে যাচ্ছে। ফলে এটা আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। এর উপায় হিসেবে যদি
প্রতিদিন একটি করে আপেল খাওয়া হয়। তাহলে বয়সজনিত জটিল অ্যালঝেইমার্স রোগ
প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
১৩। রক্তচাপ কমাতে
আপেলে থাকা পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও আঁশ যা রক্তচাপ কমাতে অনেক ভাবে সাহায্য করে।
১৪। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
অ্যাপেল কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করতেও অনেক সাহায্য করে থাকে। সুতরাং প্রতিদিন অ্যাপেল খেলে আপনি সুস্থ থাকবেন।
১৫। হাড় শক্ত করতে
আপেলে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বোরন যা হাড়কে শক্ত রাখতে সাহায্য করে।
১৬। আপেল খাওয়ার নিয়ম
আপেল
খেতে হবে ভালভাবে চিবিয়ে। তাহলেই হজম শেষে এর সকল উপাদান নিতে পারবে শরীর।
ভালভাবে না চিবিয়ে টুকরো টুকরো আপেল গিলে ফেললে সেই টুকরা গলাতে
পাকস্থলিকে প্রচুর বেগ পেতে হয়। এতে পেট ব্যথা হতে পারে। আপেল চিবিয়ে
খাওয়ায় দাঁতও পরিস্কার হয়, টুথ ব্রাশের কাজ করে। খালি পেটে আপেল খাওয়া উচিৎ
নয়। তাহলে আপেলে থাকা এসিডের কারণে বদহজম হতে পারে। আর খাওয়ার আগে অবশ্যই
ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে আপেলটিকে।
No comments:
Post a Comment