জনপ্রিয়
ফল হিসেবে কদবেল আমাদের দেশে পরিচিত। এ ফলের আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশে।
ভারত,
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় কদবেল জন্মেও প্রচুর। এই ফলের স্বাদ টক ও
হালকা মিষ্টি। মুখের স্বাদ বাড়াতে এর তুলনা নেই। আচার, চাটনি কিংবা
মাখিয়ে খাওয়া যায় কদবেল। তবে এই ফল কেবল মুখের রুচিই বৃদ্ধি করে না,
পেটের নানা সমস্যা দূর করতেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কদবেলের আছে নানা
পুষ্টিগুণ। এতে খাদ্যশক্তি রয়েছে কাঁঠাল ও পেয়ারার প্রায় সমান। আমিষের
পরিমাণ রয়েছে আমের চেয়ে সাড়ে ৩ গুণ, কাঁঠালের দ্বিগুণ, লিচুর চেয়ে ৩
গুণ, আমলকী ও আনারসের চেয়ে ৪ গুণ বেশি এবং পেঁপের চেয়ে দ্বিগুণের একটু
কম। কদবেলের সবই মূল্যবান। পাতা, ফল, ছাল ও শাঁস ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করা
হয়। কদবেল খেলে ডায়রিয়া, আমাশয় যেমন দূর হয়, তেমনই গলার যে কোনো
সমস্যা দূর হয়। সর্দি, কাশির জন্য উপকারী তো বটেই, কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে।
এছাড়া কদবেল উদ্দীপক ও মূত্রবর্ধক কাজে বিশেষ ফল দিয়ে থাকে। যকৃৎ ও
হৃৎপিণ্ডের জন্যও বিশেষ উপকারী হলো কদবেল।
পুষ্টিকনা
প্রতি
১০০ গ্রাম কদবেলের পুষ্টিমান পানীয় অংশ ৮৫.৬ গ্রাম, খনিজপদার্থ ২.২ গ্রাম,
খাদ্যশক্তি ৪৯ কিলোক্যালোরি, আমিষ ৩.৫ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৮.৬
গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫.৯ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৬ মিলি গ্রাম, ভিটামিন-বি ০.৮০
মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন-সি ১৩ মিলিগ্রাম এবং প্রতি ১০০ গ্রামের শক্তি
উত্পাদন ক্ষমতা ৪৯ কিলো ক্যালোরি ইত্যাদি।
কদবেলের কার্যকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
কিডনি সুরক্ষায়
কদবেল
উদ্দীপক ও মূত্রবর্ধক কাজে বিশেষ উপাদেয়। এ ফল নিয়মিত খেলে কিডনি সুরক্ষিত
রাখে। প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কিডনি সমস্যা দূর করার জন্য সেরা
প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহার করতেন। এ ফল যকৃত ও হৃৎপিণ্ডের জন্যও
বিশেষ উপকারী।
পেটের রোগ নিরাময়ে
কদবেলে
থাকা ট্যানিন নামক উপাদান দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া ও পেট ব্যথা ভালো করে।
কদবেল গাছের বাকল মধু সঙ্গে মিশ্রিত করে খেলে পেটের রোগ আমাশয় ভারো করে।
কাঁচা কদবেল ছোট এলাচ, মধু দিয়ে মাখিয়ে খেলে বদহজম দূর হয়। এই ফলের নির্যাস
কলেরা এবং পাইলসের জন্য প্রতিষেধক ওষুধ হিসাবে কাজ করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধক
কদবেলের নির্যাস ব্যাপকভাবে ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য আয়ূর্বেদী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
রূপচর্চায় সহায়ক
আমাদের
অনেকের ব্রণ ও মেছতার সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যাই সব বয়সের মানুষ
মুখোমুখি হয়। কিন্তু এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে, আপনি কাঁচা কদবেলের
রস মুখে মাখলে বেশ উপকার পেতে পারেন।
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
কদবেল শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্নায়ুর শক্তি যোগায়। ত্বকের জ্বালা পোড়া কমাতে কদবেলের ক্বাথ মলম হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
পেপটিক আলসার নিরাময়ে
কদবেল পাতার ক্বাথ পানীর সঙ্গে নিয়মিত পান করলে পেপটিক আলসার দ্রুত ভালো হয়। আলসারের খত সারাতে তাজা কদবেল বেশ কার্যকরী।
শ্বাসযন্ত্রের রোগ নিরাময়ে
কদবেল
পাতার নির্যাস শ্বাসযন্ত্রের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। দুধ
এবং চিনি দিয়ে কদবেলের পাতা মিশিয়ে স্নেহপূর্ণ খাদ্য তৈরি হয়। এই রস
শিশুদের পেটের ব্যথার চিকিৎসায় চমৎকার কাজ করে। কদবেল যকৃত ও হৃৎপিণ্ডের
জন্যও বিশেষ উপকারী।
রক্ত স্বল্পতা রোধে
এই
ফল রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। বুক ধড়ফড় এবং রক্তের নিম্নচাপ রোধেও
সহায়ক। চিনি বা মিছরির সঙ্গে কদবেল পাউডার মিশিয়ে খেলে সঙ্গে শরীরের শক্তি
বৃদ্ধি হয় এবং রক্তা স্বল্পতাও দূর হয়।
শিশুর পেটের ব্যথা কমাতে
কদবেল
পাতার নির্যাস শ্বাসযন্ত্রের চিকিত্সায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দুধ এবং
চিনি দিয়ে কদবেলের পাতা মিশিয়ে খাওয়ালে শিশুদের পেটের ব্যথার সমস্যা চলে
যাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূরীকরণে
কদবেলের ফুল শুকিয়ে পাউডার করে সারা বছর সংরক্ষণ করে রাখা যায়। ফল দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠবদ্ধতা, দীর্ঘস্থায়ী আমাশা দূর করে।
স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে
কদবেল মহিলাদের হরমোনের অভাব সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে থাকে। এমনকি স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার নিরাময় করে থাকে।
সর্দি-কাশি প্রতিরোধে
কদবেল
সর্দি-কাশির জন্য অনেক উপকারি ফল। কদবেল খেলে সর্দি-কাশি চলে যায়। সুতরাং
সর্দি-কাশি হলে আপনি যদি কদবেল খান, তাহলে আপনার সর্দি-কাশি সেরে যাবে
অনায়াসে।
রুচি বৃদ্ধিতে সহায়ক
কদবেল
রুচি বৃদ্ধিতে অনেক উপকার করে থাকে। কদবেলের টক মিষ্টি স্বাদ মুখের রুচি
বাড়াতে অনেক সাহায্য করে । যদি করোর খেতে অরুচি থাকে তাদের জন্য কদবেল অনেক
উপকারি।
No comments:
Post a Comment