ভুট্টা অনেক জনপ্রিয় একটি শস্য। এটি সারা পৃথিবীতে পাওয়া যায়। সকলের বিভিন্ন ধরনের খাদ্য তৈরিতে ভুট্টার
তুলনা অসাধারন। আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভুট্টা। ভুট্টা শুধুমাত্র বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরিই সরবরাহ করেনা বরং ভিটামিন এ, বি, ই এবং অনেক প্রকার খনিজ ও সরবরাহ করে। উচ্চমাত্রার ফাইবারের উপস্থিতির জন্য ভুট্টা পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শরোগ ও কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভুট্টার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্টিকারসিনোজেনিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং আলঝেইমার্স রোগ প্রতিরোধ করে।
মানসম্মত পুষ্টিকর উপাদানের উপস্থিতির জন্য ভুট্টার স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ভুট্টা ফাইটোকেমিক্যালে সমৃদ্ধ। ভুট্টার গবেষণালব্ধ ও সুদূরপ্রসারী স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো সম্পর্কে জেনে নেই আসুন।
১। খনিজের শক্তিশালী উৎস
ভুট্টা আমাদের একটি পরিচিত এবং পছন্দের খাদ্য। আর আমাদের দেহে খনিজের প্রয়োজন খুবই বেশি। এই খনিজের শক্তিশালী একটি উৎস বেবি কর্ণ, ছোট্ট হলুদ ভুট্টার শাঁসে এত বেশি খনিজ থাকে যা আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও কপার থাকে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসফরাস থাকে যা স্বাস্থ্যকর হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয়। এই খনিজ উপাদানটি শুধুমাত্র হাড়ের ফাটল রোধ করেনা বরং কিডনির স্বাভাবিক কাজ বৃদ্ধি করে।২। গর্ভাবস্থার জন্য অত্যাবশ্যকীয়
গর্ভাবস্থা একজন মহিলার জন্য কঠিন একটা সময়। এই সময় কোষ্ঠকাঠিন্য হলে মহিলাদের অনেক কষ্ট হয়। ফলিক এসিডের চমৎকার উৎস বেবিকর্ণ এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক সাহায্য করে, এবং শিশুর ওজন বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় খুবই সাধারণ একটি অভিযোগ হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্যতালিকায় বেবিকর্ণ যুক্ত করাটা জরুরী।৩। পরিপাকের উন্নতি ঘটায়
পরিপাকের উন্নতিতে ভুট্টার তুলনা বলে শেষ করা যাবে না। উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে বলে ভুট্টা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। ডায়েটিশিয়ান ডা. আস্থা শর্মা বলেন, একটি গবেষণায় কোলন ক্যান্সারের রোগীদের ভুট্টা খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।৪। হাইপারটেনশন কমায়
ভুট্টা খেলে হাইপারটেনশন কমে। কারন ভুট্টার মধ্যে ফেনল উপস্থিত থাকে। ফলে ফেনলের উপস্থিতির জন্য ভুট্টা খেলে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।৫। অ্যানেমিয়া প্রতিরোধ করে
বেবি কর্ণে ভালো পরিমাণে আয়রন থাকে। তাই ভুট্টা খেলে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয় এবং রক্তস্বল্পতা বা অ্যানেমিয়া প্রতিরোধ করে।৬। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
ভুট্টা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। তাই ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকেল এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।৭। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে
ভুট্টা ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েড ও বায়োফ্লাভোনয়েডস এ সমৃদ্ধ যা রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। জার্নাল অফ নিউট্রিশনাল বায়োক্যামিস্ট্রির মতে, ভুট্টার তুষের তেল গ্রহণ করলে প্লাজমার এলডিএল কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমে শরীরে কোলেস্টেরলের শোষণ কমানোর মাধ্যমে।৮। দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়
ভুট্টার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। আর ভিটামিন এ এর ভালো উৎস হওয়ায় ভুট্টা দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করে।৯। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিস আমাদের জন্য একটি মারাক্ত রোগ। যা নিয়ন্ত্রণ না করলে মানুষের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। বেবি কর্ণের গ্লিসামিক ইনডেক্স কম বলে ডায়াবেটিস মেলাইটিসের জন্য উপকারি। সুতরাং চিকিৎসাকরা বেবি কর্ণ খাওয়ার কথা বলে থাকে। আর এই বেবি কর্ণের ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে রাখা সমভাব।১০। ত্বকের যত্নে
ভুট্টা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ত্বককে দীর্ঘদিন যাবৎ সতেজ থাকতে সাহায্য করে। ভুট্টা খাওয়ার পাশাপাশি ভুট্টার তেল ব্যবহার ও উপকারি কারণ এতে লিনোলেইক এসিড থাকে। ভুট্টার মাড় ত্বকের চুলকানি ও র্যাশ প্রশমিত হতে সাহায্য করে।১০০ গ্রাম বেবিকর্ণে আছে : ১৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২৬ ক্যালোরি, ১ গ্রাম ফ্যাট, ২ গ্রাম প্রোটিন, ১.৬ গ্রাম ফাইবার। বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত হতে এবং স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য আপনার খাদ্যতালিকায় ভুট্টা রাখুন।
No comments:
Post a Comment