আজকাল ব্যস্ত জীবনে একটু সময় বের করে ব্যায়াম করা বা নিজের পেটের অতিরিক্ত মেদ কমানোর জন্য দৌড়ানোর
মত সময় যেন কারোর হয়ে উঠে না। ফলে পেটের মেদের সাথে সাথে বিভিন্ন রোগে আমাদেরকে বাসা বাধে। তাই আমরা এমন কিছু খোজ করি, যা খেলে বসে বসে ওজন কমবে। আর তার জন্য বেশি সময়ও ব্যয় করতে হবে না। যদিও আমরা জানি ওজন কমানো খুব কঠিন একটি কাজ, তবে কাজটি অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন ওজন কমানোর ব্যাপারে মনকে স্থির করা, অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকা এবং লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাওয়া। তবে এজন্য শুধু মুখে বললেই কাজ হবে না। সবচেয়ে বড় কথা কোন ধরনের ম্যাজিক দিয়ে ওজন কমানো সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা যার ফলে আপনি আপনার ওজন কমানোর স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন এবং শরীরের সুন্দর একটি গঠন ফিরে পাবেন।
যদিও আমাদের সময় থাকে না তবুও চেষ্টা করে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও একটি স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা অনুসরণ করলে, সঠিক উপায়ে শরীরের বাড়তি মেদ ঝড়ানো সম্ভব। তবে অবশ্যই শরীরের প্রতি খুব নিষ্ঠুর হওয়া ঠিক নয়। শরীরকে ভালোবেসে কী খাচ্ছেন ও কতটুকু খাচ্ছেন তা খেয়াল রাখতে হবে।
বাড়তি ক্যালরি গ্রহণ কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করা। বাড়তি চিনি যোগ না করে স্বাস্থ্যকর পানীয় খেলে তা শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করবে। সাথে সাথে ওজন কমতেও সাহায্য করবে। তবে এই ক্ষেত্রে অবশ্যই বাসায় তৈরি করা পানীয় পান করার কথা বলা হচ্ছে। এটা বাইরের হলে অস্বাস্থ্যকর হতে পারে। সুতরাং এখানে ১০টি স্বাস্থ্যকর পানীয়ের কথা জানান হল যা ওজন কমাতে সাহায্য করবে-
লেবুর শরবত
অস্বীকার করার উপায় নেই যে ওজন কমানোর জন্য প্রথম যে পানীয়টির কথা মনে আসে সেটা হল লেবুর শরবত। সকালে খালি পেটে লেবুর শরবত ওজন কমানোর গতিতে ত্বরান্বিত করে, দেহকে দূষণ মুক্ত করতে সাহায্য করে এবং সারাদিন ঝরঝরে রাখে। লেবুর শরবতটি যেভাবে খাবেন, এক গ্লাস হালকা গরম পানির মধ্যে বড় সাইজের লেবুর অর্ধেক রস দিয়ে তার সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাবেন। এভাবে খেতে থাকলে অবশ্যই উপকার পাবেন।গাজরের জুস
এই পানীয়টির মধ্যে ভরপুর থাকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ, বি১, বি৩, বি৬, সি। এবং সেই সাথে এতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের বিপাকক্রিয়াকে উন্নত করে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে এটি পেটের মেদ কমাতে অনেক সাহায্য করে।ডালিমের জুস
প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই পানীয়টি দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ওজন কমানোর গতিকে কমিয়ে আনে।করল্লার জুস
যদিও এটা অনেকেই পছন্দ করেন না বা শুনতে অরুচিকর মনে হতে পারে কিন্তু করলার জুসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহকে সম্পূর্ণ রূপে দেহের দূষণ দূর করতে সাহায্য করে, হজমক্রিয়া উন্নত করে, বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং দেহের কোষে চর্বি জমা হতে বাঁধা দেয়।আমলকীর জুস
ভিটামিন সি এর একটি সমৃদ্ধ উৎস হচ্ছে আমলকী এবং এটি দেহের বিপাকক্রিয়ার হার বৃদ্ধি করে যা দেহে চর্বি জমা হতে বাধা দেয়। আমলকী মেদ কমাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।গম পাতার রস
শুনে হয়তো অনেকের অবাক লাগতে পারে কিন্তু এটি আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারী। দেহের দূষণ দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে গম পাতার রস খাওয়া যা দেহের ওজন কমাতে ঔষধের মত কাজ করে। এটি পটাসিয়ামে ভরপুর যা দেহের ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে এবং এতে আরো রয়েছে খাদ্যআঁশ যা পেট ভরা থাকার অনুভূতি দেয়।তরমুজের জুস
তরমুজের জুস হচ্ছে ওজন কমানোর জন্য একটি আদর্শ পানীয় যা ইলেক্ট্রোলাইট, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে পরিপূর্ণ। এটি আপনার ওজন কমানোর গতিকে ত্বরান্বিত করে কোন রকম ক্লান্ত ও দুর্বলতা বোধ ছাড়াই।অ্যালোভেরা জুস
যদিও এই পানীয়টির স্বাদ খুব একটা মুখরোচক নয় তবে এই পানীয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে দেহের বিপাকক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এই অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত ভাবে পান করা হলে এটি শুধু যে ওজন কমাতে সাহায্য করবে তা নয় এটি আপনার চুল এবং ত্বককেও স্বাস্থ্যবান করবে।ক্রানবেরি জুস
এই জুসটিও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বেশ শক্তিশালী একটি উৎস যা দেহের সংরক্ষিত চর্বির ভাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।বিট জুস
এটি সত্যিকার ভাবেই একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়, কারণ এতে থাকে উচ্চ পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, জিংক ও খাদ্যআঁশ এবং সেই সাথে ভিটামিন এ, বি৬, সি, ডি এবং কে। ভিটামিন এবং খাদ্যআঁশ দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে যার ফলে দেহের ওজন কমে।এই পানীয় গুলো যারা ওজন কমাতে চান শুধু তারাই নন বরং সবার দেহের সুস্থতার জন্যও সাহায্য করে। তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই পান করা শুরু করুন ।এসব পানীয়ের যেকোনো টি আপনি নিয়মিত পান করতে থাকুন, এতে আপনার দেহের সুস্থের সাথে সাথে ওজনকে কমাতে সাহায্য করবে।
ওজন কমাতে জিরার পানির উপকারিতা
এক গ্লাস পানির সাথে এক চা চামচ জিরার গুঁড়া মিশিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে। পানির রঙ বাদামি আকার ধারণ করলে চুলা বন্ধ করে দিয়ে। এরপর ঠাণ্ডা করে পান করতে হবে। এতে পেটের ব্যথা এবং হজম শক্তিকে বাড়াতে অনেক সহায়ক। এই জন্য প্রতিদিন তিনবার এই পানীয় পান করতে হবে।১। দুই চা চামচ জিরা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে পানি সেদ্ধ করে সকালের চা হিসেবে পান করলে অনেক উপকার পাবেন। ভেজানো জিরা চাবালে এবং নিয়মিত এটি পান করলে আপনার শরীর থেকে চর্বি বের করে দিতে সহায়তা করবে।
২। প্রথম পদ্ধতিটি কাজ না করলে দ্বিতীয় উপায়টি বেছে নিতে পারেন। খাবারে জিরার পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে হবে। এক চামচ জিরার গুঁড়ার সাথে পাঁচ গ্রাম দই মিশিয়ে নিতে হবে। এটি নিয়মিত খেলে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
৩। তিন গ্রাম জিরার গুঁড়ার সাথে কয়েক ফোঁটা পানি এবং মধু মিশিয়ে নিতে হবে। নিয়মিত এটি পান করলেও অনেক উপকার হবে। সবজির স্যুপ বা বাদামি চালের সাথে এক চামচ জিরার গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি আপনার ওজন কমাবে এবং আপনাকে ফিট রাখবে।
৪। রসুন এবং লেবু উভয়ই শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে। গাজর এবং অন্যান্য সবজি সেদ্ধ করে নিতে পারেন। রসুন কুচি কুচি করে কেটে এর মধ্যে দিতে হবে এবং লেবুর রস মিশাতে হবে। কিছু জিরার গুঁড়া উপরে ছিটিয়ে দিলে আরো উপকার হবে। প্রতিরাতে খাবারটি এভাবেই খেতে হবে। উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অন্তত ১৫ দিন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আপনার শরীরে জাদুকরী পরিবর্তনটা আপনি নিজেই টের পাবেন।
No comments:
Post a Comment