আজকাল মানুষের জীবন হয়ে গেছে বিলাসবহুল, আগের দিনে মানুষ কোথাও যেতে চাইলে তারা পায়ে হেটে সেখানে পোছিয়ে যেত। কিন্তু আজকাল মানুষ হয়ে গেছে অলস, একটু পথ জেতে হলেও তারা হাটা পছন্দ করে না। এটা শুধু যে শহরের পরিবেশে এসে গেছে তাই নয়, গ্রামেও মানুষ বিলাসী হয়ে গেছে। আর এর ফলে মানুষের বিভিন্ন রোগের সাথে
সাথে সামনে বড় একটা পেট বের হচ্ছে। যার জন্য মানুষের পায়ের উপর সব ওজন এসে পড়ছে। বেশি দূর হাটতে পারছে না, এবং বিভিন্ন রোগের সম্মুখে তাদের পরতে হচ্ছে। এছাড়াও খুব বেশি বয়স না হলেও ভুড়ির কারনে বয়স বেশি দেখাতে শুরু করেছে।
যত সহজে দেহে মেদ জমে, সেটাকে আগের অবসহায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা যেন ততটা কঠিন। কিন্তু ছোট কিছু কৌশল জানা থাকলে, আর প্রতিদিনকার কিছু সহজ অভ্যাসের মাধ্যমে আপনি নিজেই কমিয়ে ফেলতে পারবেন আপনার পেটের এই বাড়তি মেদ। জীমে গিয়ে টাকা নষ্ট করার প্রয়োজন নেয়। বাসাই বসে জেনে নিন ৮টি সহজ উপায়
১। রোজ সকালে এক গ্লাস গরম লেবুর শরবত
আপনি যদি রোজ সকালে এক গ্লাস গরম লেবুর শরবত খান। তাহলে মেদ কমানোর ক্ষেত্রে অনেক উপকার পেতে পারেন। মনে রাখবেন, চিনি ছাড়াই শরবত খেতে হবে। এক গ্লাস হালকা গরম পানির মধ্যে অর্ধেকটা লেবু চেপে নিতে হবে, সাথে আদার রস ও মধু মিশিয়ে এভাবে প্রতিদিন সকলে এবং রাতে পান করতে হবে। এভাবে নিয়মিত পান করলে আপনার বাড়তি মেদ ও চর্বি কমে যাবে।২। সাদা ভাতের বদলে লাল চালের ভাত
আপনি সাদা চালের ভাতের বদলে লাল চালের ভাত খেতে পারেন। এছাড়াও ব্রাউন ব্রেড, আটার রুটি বেছে নিতে পারেন। এতে আপনার দেহে অতিরিক্ত ক্যালোরি ঢুকবে না। এবং জমা চর্বি কমে আসবে ধীরে ধীরে।৩। চিনিযুক্ত খাবারকে না বলুন
মিষ্টি, মিষ্টি জাতীয়, কোল্ড ড্রিঙ্কস এবং তেলে ভাজা সব রকম খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা এই জাতীয় খাবারগুলো আপনার পেট ও উরুতে অতিদ্রুত চর্বি জমিয়ে ফেলে। এই খাবার ছেড়ে ফলমূল খেতে পারেন।৪। অতিরিক্ত পানি পান করুন
প্রতিদিন আপনি প্রচুর পানি পান করার চেষ্টা করুন, এতে আপনার দেহের মেটাব্লিজম বাড়ায় এবং রক্তের ক্ষতিকর উপাদান প্রস্রাবের সাথে বের করে দেয়। মেটাব্লিজম বাড়ার ফলে দেহে চর্বি জমতে পারে না ও বাড়তি চর্বি ঝরে যায়। আরও চেষ্টা করুন বরফ ঠাণ্ডা পানি না পান করতে। উষ্ণ গরম পানি পান করা উত্তম।৫। রসুন খাওয়া শুরু করুন
রোজ সকলে উঠেই খালি পেটে ২/৩ কোয়া রসুন চিবিয়ে খেয়ে নিন, পর পরই লেবুর রস পান করুন। এতে আপনার চর্বি কমাতে দ্বিগুণগতিতে কাজ করবে। তাছাড়া রক্ত চলাচলে আরও বেশি সাহায্য করবে।৬। মসলা ব্যবহার করুন
রান্নাই অতিরিক্ত মসলা খাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু আপনি জানেন কি? কিছু মসলা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে একদম ম্যাজিকের মত। রান্নায় ব্যবহার করুন দারচিনি, আদা ও গোলমরিচ। এগুলা আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাবে ও পেটের মেদ কমাতে অনেকাংশে সাহায্য করবে।৭। প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল
প্রতিদিন এক বাটি ফল ও সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন, এতে আপনার শরীর প্রচুর পরিমাণে পাবে অক্সিডেন্ট, মিনারেল ও ভিটামিন। আর এগুলো আপনার দেহে মেটাব্লিজম বাড়িয়ে পেটের চর্বি কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।৮। গোসত থেকে দূরে থাকতে হবে
বিশেষত গরুর ও খাসির চর্বিযুক্ত গোসত থেকে দূরে রাখতে হবে। এর পরিবর্তে বেছে নিতে পারেন মাছ, কিন্তু অবশ্য কম তেলে ভেজে খেতে হবে। দেখবেন খুব অল্প দিনে আপনার চর্বি কমে গেছে।আমাদের ব্যায়াম করার সময় নেয় তো কি হয়েছে। এই সকল নিয়ম সঠিকভাবে মেনে চললে, দেহের মেদ কমে যাবে। আর পেয়ে যাবেন মেদহীন সুন্দর স্বাস্থ্য। তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন।
দেহের ওজন কমানোর ১৫ টি কার্যকরী টিপস
১। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, বিশেষ করে লোকজন তাড়াতাড়ি খাবার গ্রহন করে। সেটা ঠিক নয়, খাবার যখন খাবেন ধীরেধীরে খান। ভালোমত চিবিয়ে খাবারের স্বাদ গ্রহন করুন। ম্যাক্রোবায়োটিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, মুখভর্তি খাবার ৩০ বারের মত চিবালে মিশ্রিত লালার এনজাইম খাবার হজম করতে সহায়তা করে।২। খাবার গ্রহনের সময় পেট ভর্তি হয়েছে মনে হলে খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। আপনার পেট ভরে গেছে কি না সেই জিনিসটা মস্তিস্কের বুঝতে লাগে প্রায় ২০ মিনিট।
৩। প্রতি বেলায় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কোনো বেলায় খাওয়া বাদ দেবেন না। অনেকে মনে করেন দিনে একবেলা না খেলে ওজন হ্রাস হতে থাকবে। আসলে কিন্তু তা নয়। খাওয়া বন্ধ দিলে আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যায়। আর সেকারনে আপনার ক্ষুধার পরিমান বৃদ্ধি পাবে। যে বেলায় না খাবেন ঠিক তার পরের বেলায় আপনি আপনার মনের অজান্তেই বেশি খেয়ে ফেলবেন।
৪। ওজন কমানো দীর্ঘ সময়ের বিষয়। আপনি ডায়েট কন্ট্রোল করা অবস্থায় প্রায়ই ওজন মেপে দেখেন ওজন কতটুকু কমলো। যখন দেখেন আপনার ওজন অতিসামান্য পরিমান হ্রাস হচ্ছে তখন আপনি হতাশ হয়ে পড়েন এবং চেষ্টা করা বন্ধ করে দেন। তাই নিয়মিত ওজন মাপবেন না। প্রতি সপ্তাহে একবার ওজন মাপতে পারেন। মনে রাখতে হবে তড়িঘড়ি করে দেহের ওজন কমানো সম্ভব না।
৫। ছোট প্লেটে খাবার নিয়ে খান। এতে করে আপনার খাবারের মাত্রা কমে আসবে।
৬। মদ্যপান করার অভ্যাস থাকলে পরিত্যাগ করতে হবে। এলকোহল মধ্যে এম্পটি ক্যালরি থাকে।
৭। যেসব খাবারে বেশি ফাইবার থাকে সেগুলো খান। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার দীর্ঘক্ষণ আপনার পাকস্থলী পরিপূর্ণ রাখবে আর পরিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করবে।
৮। দৈনিক কমপক্ষে ৭-৮ গ্লাস পানি পান করুন। অনেক সময় ক্ষুধাবোধের কারনে পানির তৃষ্ণা অনুভূত হয় না। দুপুর বেলায় বড় গ্লাসে করে পানি খেয়ে দেখুন আপনার ক্ষিধে লাগবে, তবে অন্তত দশ মিনিট পর।
৯। জাংকফুড, মিষ্টিজাতীয় খাবারের বদলে ফলমূল খাবার অভ্যাস করুন। লোভ সংবরন করতে হবে। অল্প অল্প করে কয়েকবার খাবার গ্রহন করুন। এতে করে আধপেটা থাকার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
১০। দেহের ওজন তখনি কমে যখন আপনার ক্যালরি গ্রহনের পরিমানের চেয়ে ক্যালরি অবমুক্ত করবার পরিমান বেশি হবে। তার জন্যে আপনাকে শরীরচর্চা করতে হবে। তবে যেকোনো প্রকারের শরীরচর্চার আগে আপনার মেডিকেল কন্ডিশন চেকআপ করে নিবেন।
১১। ওজন কমাতে প্রচুর তাজা ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। কারন এই শাকসবজি ও ফলমূল হলো কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য, তাই যাঁদের ওজন বেশি তাঁদের বেশি করে এগুলো খাওয়া উচিত।
১২। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে। কারণ, লবণ শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
১৩। দুধযুক্ত খাবার, যেমন: পনির, মাখন—এগুলো পরিহার করতে হবে। কারণ, এগুলো উচ্চ চর্বিযুক্ত। সঙ্গে মাংস ও আমিষজাতীয় খাবারও নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে।
১৪। উচ্চ শর্করাসমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন—চাল, আলু অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেতে হবে, আর গম (আটা) খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
১৫ তিক্ত স্বাদযুক্ত সবজি ও করলা খুবই কার্যকর বাড়তি ওজন কমানোর জন্য।
১৬। মসলাজাতীয় খাবার, যেমন: আদা, দারচিনি, কালো মরিচ—এগুলো প্রতিদিনের খাবারে রাখতে হবে। অনেকে জানে না কিন্তু মসলাজাতীয় খাবার হলো ওজন কমানোর কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি।
১৭ যাঁরা পথ্য নিয়ন্ত্রণের নিয়ম মেনে চলেন বা দিনের পর দিন উপবাস করেন ওজন কমানোর জন্য, তাঁদের জন্য মধু ও লেবুর রস খুবই উপকারী।
এটি কোনো ধরনের শক্তি ও ক্ষুধা নষ্ট না করে। এ ধরনের চিকিৎসায় এক চামচ টাটকা মধুর সঙ্গে আধা চামচ কাঁচা লেবুর রস আধা গ্লাস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে প্রতিদিন কয়েকবার খেতে হবে।
১৮। বাঁধাকপিকে ওজন কমানোর আরেকটি কার্যকর উপায় হিসেবে ধরা হয়। বাঁধাকপি মিষ্টি ও শর্করাজাতীয় খাবারকে চর্বিতে রূপান্তর করতে বাধা দেয়। এ জন্য বাঁধাকপি খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে ওজন কমাতে। এটিকে কাঁচা অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়।
২০। শারীরিক ব্যায়াম হলো ওজন কমানোর সবচেয়ে কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। ব্যায়াম শরীরের জমাকৃত ক্যালরি ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা চর্বি হিসেবে জমা থাকে। তা ছাড়া ব্যায়াম পেশির টান কমায় এবং শক্তি বৃদ্ধি করে। ব্যায়াম শুরু করতে পারেন হাঁটাচলা করে, যা আস্তে আস্তে দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ও অন্যান্য শারীরিক কসরত করে নিয়মিতভাবে চালিয়ে যেতে পারেন।
২১। পাশাপাশি পথ্য নিয়ন্ত্রণের এ নিয়ম মেনে চলতে পারেন। পরিমাণমতো ভাগ করে প্রতিদিন খাবার খাবেন এবং অবশ্যই যেন প্রতিটি ভাগ অল্প পরিমাণে হয়। প্রতিটি ভাগে যে পরিমাণ ভাত থাকবে, তা যেন কোনোভাবেই এক মুঠের বেশি না হয়। নিয়মিতভাবে ছোট ছোট ভাগে (চার-পাঁচ ঘণ্টা অন্তর) খাবার খেলে আপনার খাবার পরিপাক ও রাসায়নিক রূপান্তর বাড়বে, যা দেহে চর্বির জমাট বাঁধায় বাধা দেবে। সঙ্গে অবশ্যই ব্যায়াম চালিয়ে যাবেন আপনার বর্ধিত ওজন কমাতে।
খুবই সাধারণ ও উপকারী এই নিয়মগুলো মেনে চলুন আর ফলাফল নিজেই উপলব্ধি করুন।
No comments:
Post a Comment