দেশী নাম: আমলকী
ইংরেজী নাম: Aowla (Emblica)
অন্যান্য নাম: আমলকীর ইউনানী নাম আমলা, আয়ুর্বেদিক নাম ধাত্রী, শ্রীফল বা অসৃত ফল(আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে একে রোটিনও বলা হয়)।
বৈজ্ঞানিক নাম: phyllanthus emblica.
জন্মস্থান: আমলকীর আদিভূমি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হলেও ফলটি সবচেয়ে ভালো জন্মে পাহাড়ে
উপকারিতা: আমলকীর রয়েছে বেশ কিছু ভেষজ গুণ-
- আমলকীর টক ও তেতো মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়।
- কফ, বমি, অনিদ্রা, ব্যথা-বেদনায় আমলকী অনেক উপকারী।
- হাপানী, কাশি, বহুমূত্র, অজীর্ণ ও জ্বর নিরাময়ে বিশেষ কার্যকরী।
- সর্দি-কাশি, পেটের পীড়া ও রক্তশূন্যতা দূরীকরণে বেশ ভালো কাজ করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি ও বমিবমি ভাব দূর করে। স্টমাক এ্যাসিডে ব্যালেন্স বজার রাখে।
- নতুন রক্ত, গোশত ও হাড় তৈরীতে বিশেষভাবে কাজ করে।
- শরীর ঠাণ্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, মাসল টোন মজবুত করে।
- এটি হৃদযন্ত্র, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে।
- শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে।
- লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে দাঁত ও নখ ভাল রাখে।
- ত্বক ও চুল সুস্থ ও সুন্দর করে। শুকনো আমলকী চুল বৃদ্ধি করে।
- সানবার্ন, সানস্ট্রোক থেকে রক্ষা করার উত্তম উছিলা।
- পায়খানা স্বাভাবিক রাখা ও পুরুষের দেহে বীর্যবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
- এ্যাজমা, পাইলস, ব্রঙ্কাইটিস সমস্যা কমায়।
-
এর এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি র্যাডিকালস প্রতিরোধ করতে সাহায্য
করে। বুড়িয়ে যাওয়া ও সেল ডিজেনারেশনের অন্যতম কারণ এই ফ্রি র্যাডিকালস।
- অ্যাসিডিটি, স্কার্ভি ইত্যাদি নানারকম সমস্যায় আমলকী কার্যকর।
- লিভার ভাল রাখে, ব্রেনের কার্যকলাপে সাহায্য করে ফলে মেন্টাল ফাংশনিং ভাল হয়।
- ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখাতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
- চর্মরোগের চিকিৎসায়ও আমলকী ব্যবহার হয়।
- এটি চোখের জন্যও বেশ উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িও ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
খাওয়ার নিয়ম
কাঁচা খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। তবে শুকিয়ে এবং আচার বানিয়ে সংরক্ষণ করে খেতে পারেন।
আমলকীর রয়েছে হরেকরকমের ব্যবহার পদ্ধতি।
আধা চূর্ণ শুষ্ক ফল এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজম সমস্যা কেটে যাবে। খাবারের সঙ্গে আমলকীর আচার হজমে সাহায্য করে।
আমলকীর আচার বা মোরব্বা মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা দূর করে।
কাঁচা আমলকী স্কার্ভিসহ ভিটামিন সি ও বি-এর অভাবজনিত যে কোন রোগের জন্য বেশি উপকারী।
আমলকীর জুস দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখার জন্য উপকারী। ছানি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যায় উপকারী।
আমলকীর জুস ব্রঙ্কাইটেস ও এ্যাজমার জন্য উপকারী।
রুচী ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন।
আমলকী দিয়ে ধরণের জ্যাম, মোরব্বা তৈরি করা যায়।
এ্যসিডিটি’র
জন্য এক গ্লাস দুধ বা পানির মধ্যে আমলকী গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে
দিনে দু’বার খেতে পারেন। এ্যাসিডেটের সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে।
আমলকী ও আমের ছেঁচা আচার
আমলকী
মাঝারি আকারে টুকরো করে নিয়ে ফুটন্ত পানির মধ্যে দিন। নরম হয়ে গেলে
নামিয়ে পানি ঝরিয়ে তাতে লবণ, আদা কুঁচি, লেবুর রস মাখিয়ে রোদে রেখে দিতে
পারেন। সারা বছরই ভাল থাকবে।
সতর্কতা
কিডনি রোগীদের খেতে বাধা আছে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে পারবেন।
প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকীতে থাকে:
ভিটামিন
সি থাকে ৪৬৩ মিলিগ্রাম, শর্করা ১৬.২ গ্রাম, আঁশ ৩.৪ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৭০
কিলোক্যালরি, ক্যালরি ৩২ কিলোক্যালোরি, ক্যারোটিন ৪৭০০ মিলিগ্রাম,
ক্যালসিয়াম ৩২ মিলিগ্রাম, পানি ৯১.৪ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৭ গ্রাম,
প্রোটিন ০.৯ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ গ্রাম, আয়রন ১.২ মিগ্রা, ভিটামিন বি১-
১০.০২ মিগ্রা, ভিটামিন২- ২০.০৮।
অন্য যে কোন ফলের চেয়ে আমলকীতে
ভিটামিন সির পরিমাণ দ্বিগুণ থেকে ১০০গুণও বেশি থাকে। এছাড়াও রয়েছে
ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সহ রয়েছে ট্যানিন,
লিপিড ও বিভিন্ন জৈব এসিড।
No comments:
Post a Comment