পৃষ্ঠাসমূহ

.

Search Your Article

Total Pageviews

Friday, October 6, 2017

পেঁয়াজের কিছু অতুলনীয় গুণাবলী

পেঁয়াজ আমরা প্রতিদিন কোন না কোন ভাবে খেয়ে থাকি। রান্নার ক্ষেত্রে মসলা হিসেবে পেয়াজের রয়েছে বিশেষ উপকারীতা। রান্না করার সময় প্রায় সকল দেশের মানুষেরাই পেয়াজ ব্যবহার করে থাকে।
মুখ রোচক খাদ্য ছাড়াও পেয়াজের রয়েছে বিভিন্ন ঔষধী গুন। অতি পরিচিত পেঁয়াজের হরেকরকম গুণের কথা আমরা অনেকে জানি না। কিন্তু এই পেঁয়াজের আছে নানা গুণ এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি ছাড়াও পেঁয়াজে রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। একটি বড় পেঁয়াজে ৮৬.৮ শতাংশ পানি, ১.২ শতাংশ প্রোটিন, ১১.৬ শতাংশ শর্করা জাতীয় পদার্থ, ০.১৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ০.০৪ শতাংশ ফসফরাস ও ০.৭ শতাংশ লোহা থাকে। এছাড়া পেঁয়াজে ভিটামিন এ, বি ও সি আছে।
বিভিন্ন ধরণের রোগ ও ইনফেকশন রোধ করতে পেঁয়াজের অবদান অনেক। আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন এবং দ্রুত সুস্থ হবার জন্য কোন ঔষধ সেবন করতে চান, তাহলে পেঁয়াজ সব থেকে উপকারী। পেঁয়াজের অসাধারন ব্যবহার এখানে দেওয়া হল।

১. ডায়াবেটিক রোধ

পেঁয়াজ শরীরের ইনসুলিন বৃদ্ধি করে ডায়াবেটিক রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্তে চিনির স্তর ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

২. কোলেস্টেরল কমাতে

পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার, তন্তু, পটাসিয়াম, ভিটামিন-বি এবং ভিটামিন-সি। এতে চর্বি, কোলেস্টেরল এবং সোডিয়াম এর পরিমান কম।

৩. জ্বর, সর্দি- কাশি দূর করতে

জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, গলা ব্যথা, এলার্জি ইত্যাদি খুব দ্রুত পেঁয়াজের দ্বারা দূর  করা সম্ভব। পেঁয়াজের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে তাৎক্ষণিকভাবেই রোগ নিরাময় হয়।

৪. পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দূরকরনে

এক টুকরা পেঁয়াজ অর্ধেক করে কপালে দিয়ে রাখলে জ্বরের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দূর হয়।

৫. রক্তপাত বন্ধ করতে

নাক দিয়ে রক্ত পড়লে, এক টুকরা পেঁয়াজ নাকের সামনে নিয়ে নিঃশ্বাস নিলে, রক্তপাত মন্দীভূত অর্থাৎ থেমে যাবে।

৬. ঘুমের সমস্যা দূর করতে

যাদের ঘুমে সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন পেঁয়াজ খাবার অভ্যস করলে, তাদের ঘুমের সমস্যা অবশ্যই দূর হবে।

৭. হজমে সমস্যা সমাধানে

পেঁয়াজ পাচনতন্ত্র উন্নত করতে পারেন। যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে, পেঁয়াজ খাবার ফলে হজম রস বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি নিরাময় হয়।

৮. ক্ষত স্থান পুরন করতে

পেঁয়াজের রস পোড়া স্থানে, পোকা-মাকড়ের কামড় দেয়া স্থানে এবং মৌমাছির কামড় দেয়া স্থানে লাগালে তাড়াতাড়ি তা হতে পরিত্রাণ পাওা যায়। যদিও ক্ষত স্থানে পেঁয়াজ লাগানোর ফলে জ্বালাতন আরও বৃদ্ধি পায়।

৯. ক্যান্সার রোধে

ক্যান্সার রোধ করতেও পেঁয়াজ সাহায্য করে। এটি মাথা, ঘাড় ও কোলন ক্যান্সার দূর করতে সাহায্য করে।

১০. রোগ-প্রতিরোগে

পেঁয়াজে রয়েছে অ্যান্টি-বায়োটিক, অ্যান্টি-সেপ্টিক, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং বায়ুরোগহর। যা রোগ সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে।

১১. বাড়তি কোলেস্টেরল দূর করতে

শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে এবং ভাল কোলেস্টেরলকে সুরক্ষিত রাখে।

১২. বাতের সমস্যাই ভূমিকা

আমাদের একটা প্রচলিত রোগ বাতের ব্যাথা। বাতের প্রদাহ দূর করতে পেঁয়াজ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।

১৩. ব্যাথা দূরকরণে

শরীরের যেকোনো ব্যথা দূর করতে পেঁয়াজ ব্যাবহার করা যায়। এর জন্য তিলের তেল অথবা রেড়ীর তেলের সাথে পেঁয়াজ ভেজে নিতে হবে। তারপর ব্যথার জায়গায় লাগিয়ে রাখুন।

১৪. ত্বকের কাল দাগ দূর করতে

ত্বকের কাল দাগ দূর করার জন্য পেঁয়াজ ও হলুদের রস একসাথে মিশিয়ে লাগিয়ে রাখুন। অনেক উপকার পাবেন।

১৫. কান ও চোখের উপকারে

কান ও চোখের সমস্যা দূর করার জন্য পেঁয়াজের রস ব্যাবহার করা হয়। শিশুদের চোখের দৃষ্টি স্পষ্ট করার জন্য পেঁয়াজের রস ব্যাবহার করা হয়।

১৬. দাঁতের উপকারে

দাঁতের বিভিন্ন প্রকার রোগ থেকে সমাধানে পেঁয়াজের রসের জুড়ি নেয়। দাঁতের ক্ষয়িষ্ণু দূর করার জন্য ব্যাবহার করা হয়।

১৭. দেহের কোষ নবজীবীত করতে

পেঁয়াজ শরীরের টিস্যুগুলোকে নবজীবন প্রদান করে। সুতরাং দেহের উপকারে পেয়াজের ভূমিকা অনেক।

১৮. স্মৃতি বাড়াতে

ভাল মেমোরি ও শক্তিশালী স্নায়ুতন্ত্রের জন্য পেঁয়াজকে আপনার সব থেকে প্রিয় খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করুন।

১৯. চুল পড়া রোধ করাতে

চুল পড়া রোধ করার জন্য মাথায় পেঁয়াজের রস ব্যাবহার করুন। এটি পেঁয়াজের সব থেকে বড় সুবিধা।

২০. গ্যাসের সমস্যা দূর করতে

পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে। গ্যাসের সমস্যা দূর করার জন্য এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

21.গাছকে পোকা থেকে রক্ষা করতে

চারটি পেঁয়াজ পেষ্ট, দুই টেবিল চামচ লাল মরিচ গুঁড়ো, দুই কোয়া রসূন আর পানি ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবার দুই গ্যালন পানিতে দুই টেবিল চামচ সাবান মিশিয়ে নিন। এই সাবান পানির মধ্যে পেঁয়াজের পেষ্ট মেশান। একটি স্প্রে বোতলে এই মিশ্রণটি ঢুকিয়ে গাছে স্প্রে করুন। এটি আপনার গাছকে বিভিন্ন পোকা থেকে রক্ষা করবে।

২২. কানের ব্যথা কমাতে

হঠাৎ করে কানের ব্যথা শুরু হলে পেঁয়াজ হতে পারে এর তাৎক্ষনিক উপশম। এতে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি যা প্রদাহ প্রতিরোধ করে। কানে ব্যথা করলে এক টুকরো পেঁয়াজ কানের ভেতরে রাখুন। এটি কানের ময়লাকে নরম করে ভেতর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে থাকে। খেয়াল রাখবেন পেঁয়াজ যেন আবার খুব বেশি ভিতরে ঢুকে না যায়।

২৩. মৌমাছির কামড় ভাল করতে

মৌমাছির কামড়ে পেঁয়াজ পিষে বা এক টুকরা পেঁয়াজ কেটে লাগাতে পারেন। এটি জ্বালাপোড়া রোধ করবে এবং মৌমাছির কামড়ের কারণে কোন অ্যালার্জিজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

২৪. রং এর গন্ধ দূর

ঘরে নতুন রং করালে এক ধরণের গন্ধ থাকে। এক টুকরা পেঁয়াজ কেটে পানিতে ডুবিয়ে নতুন রং করা ঘরের এক কোণায় রেখে দিন। পেঁয়াজ রঙের গন্ধ সম্পূর্ণ শুষে নিবে।

২৫. ঠান্ডা দূর করতে

মধু ও পেঁয়াজের মিশ্রণ কফ কমিয়ে ঠান্ডা দূর করে থাকে। এটি শরীরের ব্যাকটেরিয়ার দূর করে অ্যান্টিবায়োটিক মত কাজ করে থাকে।

২৬. মরিচা দূর করতে

ছুরিতে প্রায় সময় মরিচা ধরে থাকে। একটি বড় পেঁয়াজ কাটুন মরিচা ধরা ছুড়ি দিয়ে। আর দেখুন ছুরির মরিচা একদম গায়েব হয়ে গেছে। প্রথমবার মরিচা দূর না হলে আরেকবার পেঁয়াজ কাটুন।

২৭. ইনসুলিন বৃদ্ধিতে

পেঁয়াজ শরীরের ইনসুলিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি রক্তের শর্করা কমিয়ে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করে থাকে।

২৮. হাঁড়ি পাতিলের পোড়া দাগ দূর করতে

অনেক সময় তরকারি পুড়ে হাড়ি-পাতিলে দাগ লেগে যায়। এই দাগ দূর করতে পেঁয়াজ অনেক কার্যকরী। পেঁয়াজের রস দিয়ে পোড়া হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করুন। দেখবেন পোড়া দাগ একদম দূর হয়ে গেছে।

২৯. চুলা পরিষ্কার করতে

তেল, চর্বিতে চুলা তেল চিটচিটে হয়ে যায়। এই তেল চিটচিটে ভাব দূর করে চুলা পরিষ্কার করতে পেঁয়াজের জুড়ি নেই। পেঁয়াজের রস এবং সমপরিমাণে লবণ মিশিয়ে নিন। এটি দিয়ে চুলার দাগের ওপর ঘষুন। কিছুক্ষণ পর দেখবেন সব দাগ দূর হয়ে গেছে।

৩০. যৌন ক্ষমতা বাড়ায়

পেঁয়াজ যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস করে পেঁয়াজের রস খেলে যৌন ক্ষমতা বাড়ে। এভাবে নিয়মিত খেলে যৌন ক্ষমতা প্রায় ২০০% বেড়ে যায়। যারা পেঁয়াজের রস খেতে পছন্দ করেন না তাঁরা খাবারের সাথে কাঁচা পেঁয়াজ খেলেও উপকার পাবেন

৩১. হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারি

পেঁয়াজ রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না এবং রক্তের কোলেস্টেরল কমায়। তাই পেঁয়াজ হৃৎপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অনেক কার্ডিওলোজিস্টই নিয়মিত পেঁয়াজ খেতে বলে দেন রোগীদেরকে। বিশেষ করে হার্ভাডের ডাক্তার ভিক্টর গুড়েউইচ তার রোগীদেরকে প্রতিদিন অন্তত একটি করে পেঁয়াজ খাওয়ার উপদেশ দেন।

৩২. জন্ডিস প্রতিরোধ

একটি পেঁয়াজের এক-চতুর্থাংশ সারা রাত লেবুর রসে ভিজিয়ে রেখে সকাল বেলা খেলে উপকার পাওয়া যাবে। নাকের রক্ত বন্ধ করে : নাকদিয়ে রক্ত পরলে ৩-৪ ফোঁটা পেঁয়াজের রস দিলে রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে।

৩৩. সুস্থ কিডনি

পেঁয়াজের রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে কিডনির উপকার পাওয়া যায়।

৩৪. টস্ট্রোহিক থেকে রক্ষা

সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে হিটস্ট্রোক অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। এই ধরনের স্ট্রোক হলে পায়ের ওপর এবং ঘাড়ের পেছনে পেঁয়াজ বেঁটে দিলে শরীরে ঠাণ্ডা প্রভাব ফেলে, যা স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে।

৩৫. শরীরকে বিষ মুক্ত করে

পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সালফার যৌগ আছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সালফারে এমিনো এসিড আছে যা রসুন ও ডিমে পাওয়া যায়। এই এমিনো এসিড গুলোকে মিথিওনাইন ও সিস্টাইন বলা হয়। এই উপাদান গুলো শরীরকে বিভিন্ন ক্ষতিকর ধাতুর থেকে মুক্তি দেয়। এমন কি এগুলো শরীর থেকে সীসা, আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম বের করে দেয়। পেঁয়াজ ভিটামিন সি আছে যা শরীরকে বিশুদ্ধ করে এবং সীসা, আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
আপনার পছন্দ হোক বা না হোক প্রতিদিন ১০০ গ্রাম থেকে ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত পেঁয়াজ খাওয়া উচিত। এতে আপনার শরীরের অনেক উন্নতি সাধিত হবে।

No comments:

Post a Comment