পৃষ্ঠাসমূহ

.

Search Your Article

Total Pageviews

Friday, October 6, 2017

বেগুনের গুনাগুন ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

বেগুন একটি মৌষমি সবজি। এটি সাধারণত শীতের সময়ে বেশি পাওয়া যায়। বেগুন সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি। সহজলভ্য ও সারা বছরই মেলে এটি। মধ্য যুগে ইউরোপে যেসব বেগুন পাওয়া যেত সেগুলোর আকৃতি অনেকটাই মুরগির ডিমের মতো ছিল। এ কারণেই বোধহয় ইংরেজিতে বেগুনের নাম এগপ্ল্যান্ট।
খোসাসহ বেগুন অনেক সময় তেতো স্বাদের হয়। এর কারণ, এর বয়সকাল অর্থাৎ খুব বড় হয়ে যাওয়া। তাই তাজা, টাটকা এবং কচি বেগুন খাওয়া ভালো। এতে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ দুটোই ঠিক থাকে। উল্লেখ্য, বেগুনের ত্বক পুষ্টি উপাদানের একটি ভালো উৎস। তাই বেগুনের খোসা ছাড়িয়ে রান্না করা উচিত নয়। সুস্বাদু এই সবজিটির রয়েছে নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। বেগুন flavedon, kolinergik এসিড নামে এক ধরনের এসিড রয়েছে, যা শরীরে প্রবেশকৃত রোগ জীবাণু, টিউমারের জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার আঁশ-জাতীয় খাদ্য উপাদান। যা বদ হজম দূর করে। বেগুন আরো রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, শর্করা, চর্বি, আমিষ, আয়রন। বেগুন এর উদ্ভিজ্জ আমিষ শরীরের হাড়কে  শক্তিশালী করে।  তাহলে চলুন জেনে নেই বেগুনের গুনাগুন ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
 

১। হৃদপিন্ডের জন্য স্বাস্থ্যকারি

বেগুন ফাইবার, ভিটামিন বি ১, বি ৬, বি ৩, সি, কে তে ভরপুর থাকে। এছাড়াও এতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে বলে বেগুন হৃদপিন্ডের জন্য উপকারী একটি খাবার। আরো হৃদপিন্ডের জন্য অপরিহার্য ফ্ল্যাভোনয়েড যা বেগুনেই বিদ্যমান থাকে। তাই নিয়মিত বেগুন খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় অনেক ক্ষেত্রে। কোলেস্টেরল হলো চর্বিজাতীয় উপাদান, যা রক্তে জমে যায়। যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকে, তারা কোনো রকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই খেতে পারে বেগুন। কারণ বেগুনে কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল নেই।

২। ক্যান্সার প্রতিহত করতে

বেগুনে পলিফেনল যেমন- ডেলফিনিডিন থাকে। যা ফ্রি র‍্যাযাডিকেলের ক্ষতির হাত থেকে কোষকে রক্ষা করে। এমনকি টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিহত করে এবং ক্যান্সার কোষের বিস্তার বন্ধ করতে সাহায্য করে। অন্য উপাদান যেমন- এন্থোসায়ানিন ও ক্লোরোজেনিক এসিড শরীরে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি প্রভাব ফেলে। ক্লোরোজেনিক এসিড কোষের ভেতরের এনজাইম পরিষ্কার করে, যা ক্যান্সার কোষের মৃত্যুকে উৎসাহিত করে এবং ভাইরাস জনিত রোগ তাড়াতে সাহায্য করে। বেগুন পাকস্থলী, কোলন, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্তের (এগুলো পেটের ভেতরের অঙ্গ) ক্যানসারকেও প্রতিরোধ করে থাকে। আবার যেকোনো ক্ষতস্থান শুকাতে সাহায্য করে বেগুন।

৩। খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে

মনে রাখবেন আপনার শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর শক্তি আছে বেগুনের মধ্যেই। অবশ্য তেলে ভাঁজা বেগুন থেকে আপনি খুব বেশি উপকৃত হতে পারবেন না। ৪০০ ডিগ্রী তাপে বেগুনকে বেক করলে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে না এবং সুগন্ধও পাওয়া যায় না। সুতরাং ভাজা বাদে রান্না বেগুন খাওয়া উচিত।

৪। মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটাতে

বেগুনের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট জ্ঞানীয় দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং সর্বদা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই উপকারী। ফ্রি র‍্যাডিকেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছাড়াও এই উপাদানটি মস্তিষ্ককে রোগ ও টক্সিন থেকে মুক্ত থাকতেও সহায়ক এবং মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কে বেশি রক্ত প্রবাহিত হলে অক্সিজেনও বেশি পৌঁছে দিতে থাকে। যার ফলে স্মৃতি শক্তি ও বিশ্লেষণ মূলক চিন্তার উন্নতি ঘটে।

৫। হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে

হজম শক্তির ক্ষেত্রে বেগুন অনেক সহায়ক একটি সবজি। কারন ফাইবারে সমৃদ্ধ বেগুন প্ররিপাক প্রক্রিয়ার জন্য উপকারী। এর ফাইবার শরীরের খাদ্য প্রক্রিয়াজাৎকরণে সাহায্য করে এবং পাকস্থলীতে পরিপাক রসের উৎপাদন বৃদ্ধি করার মাধ্যমে পুষ্টি উপাদান শোষণে সাহায্য করে থাকে।

৬। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে

বেগুনে উচ্চ মাত্রার ফাইবার ও কম দ্রবণীয় কার্বোহাইড্রেট থাকে বলে রক্তের গ্লুকোজ ও ইনসুলিনের মাত্রার সমস্যা আছে যাদের তাদের জন্য উপকারী খাবার। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে বেগুন।

৭। রক্ত বাড়াতে সাহায্য করতে

বেগুনে আয়রনও রয়েছে অনেক মাত্রায়, যা রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রক্তশূন্যতার রোগীরাও খেতে পারে এই সবজি। এতে চিনির পরিমাণ খুবই সামান্য। তাই ডায়াবেটিসের রোগী, হৃদরোগী ও অধিক ওজন সম্পন্ন ব্যক্তিরা নিশ্চিন্তে খেতে পারে বেগুনের তরকারিটি।

৮। মুখ ও ঠোঁটের কোণের ঘা সারাতে

বেগুনে রয়েছে রিব্লোফ্ল্যাভিন নামক উপাদান। এই উপাদান জ্বর হওয়ার পরে মুখ ও ঠোঁটের কোণের ঘা, জিহ্বার ঘা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া জ্বর জ্বর ভাব দূর করতে সাহায্য করে থাকে।

৯। ত্বক, চুল, নখকে মজবুত করতে

বেগুন ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ই’ এবং ‘কে’ (ক) সমৃদ্ধ সবজি। ভিটামিন ‘এ’ চোখের পুষ্টি জোগায়, চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর ভিটামিন ‘সি’ ত্বক, চুল, নখকে করে মজবুত। দেহে রক্ত জমাট বাঁধার বিরুদ্ধে কাজ করে ভিটামিন ‘ই’ ও ‘কে’। এই ভিটামিন চারটি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে বহুগুণে কার্যকর।  আরো বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম, যা দাঁতকে করে মজবুত, দাঁতের মাড়িকে করে শক্তিশালী। নখের ভঙ্গুরতা রোধ করে। এককথায় শুষ্ক ত্বকের জন্য বেগুন খুবই উপকারী। কারণ বেগুন ত্বকের সিক্ততা প্রদান করে অনেকাংশে।

১০। ঋতুস্রাবের সমস্যা সমাধানে

বেগুনের মধ্যে অনেক খাদ্য গুনাগুন বিদ্যমান থাকে। এই গুন ঋতুস্রাবের সমস্যা সমাধানে অনেক উপকার করে।সুত্রাং যেসব মহিলা নিয়মিত শাকসবজি, বিশেষত বেগুন খান তাদের ঋতুস্রাবের সমস্যা হয় তুলনামূলকভাবে কম।

বেগুনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কাঁচা বেগুন খাওয়া উচিৎ নয়, তাতে পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। যাদের অ্যালার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বেগুন ভীষণ ক্ষতিকর। এছাড়াও, যাঁরা আর্থ্রাইটিস বা সন্ধিপ্রদাহে ভুগছেন, বেগুন তাঁদের জন্য ক্ষতিকর। বেগুন অনেকের গলদেশ ফোলা, বমি ভাব, চুলকানি এবং চামড়ার ওপর ফুসকুড়ির সমস্যা তৈরি করে থাকে। তাই মায়েদের উচিত বেগুন খাওয়ানোর সময় বাচ্চাদের ওপর এর প্রভাব লক্ষ করা। অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে বেগুন পরিহার করা উচিত। বেগুন অধিকাংশে মানুষের অ্যালার্জি বাড়িয়ে দেয়।  জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ করার জন্য ডায়রিয়া চলাকালীন বেগুনের তরকারি খাওয়া অনুচিত। ডায়রিয়া ভালো হয়ে যাওয়ার পরে বেগুনের তরকারি খাবেন।

No comments:

Post a Comment